"অলির কথা শুনে বকুল হাসে" — বাংলা গান সম্পর্কে প্রবন্ধ

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
 "অলির কথা শুনে বকুল হাসে" গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার রচিত একটি জনপ্রিয় বাংলা গান। এই গানটি সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সর্বাধিক জনপ্রিয় হয়। এইটি একটি প্রেম পর্যায়ের গান, যেইখানে গীতিকার তাঁর বিরহ-বিচ্ছেদ এবং অপ্রাপ্তির কথা আবেদনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন। এই আবেদন করতে গিয়ে গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার গানের বিভিন্ন অংশে কয়েকটি প্রাকৃতিক এবং নৈসর্গিক উপমাচিত্র তুলে ধরেছেন যেইখানে দুই আপাত ভিন্ন সত্তার মধ্যে এক অচ্ছেদ্য বন্ধন লক্ষ্য করা যায়, যা তাদের সম্পর্ককে অবিচ্ছেদ্য করে তোলে। গীতিকার এইরূপ অন্তরঙ্গতার অপ্রাপ্তির দুঃখ এই গানে কোমল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার (১৯২৪—১৯৮৬) আধুনিক বাংলা গানের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকার। তিনি ছাত্রজীবনে বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্যে, উভয়েই, এম. এ.শিক্ষাগত ডিগ্রি পান। তাঁর লেখা বহু গান জনপ্রিয় হয় এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন "কফিহাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই", "পথের ক্লান্তি ভুলে", "আমি যামিনী, তুমি শশী হে" ইত্যাদি।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সাথে গৌরীপ্রসন্ন বেশ কিছু গানে একসাথে কাজ করেছিলেন। "অলির কথা শুনে" এই গানটিতেও একই শিল্পীদ্বয় কাজ করেন। গৌরীপ্রসন্ন রচিত এই গানটির গায়ক (কণ্ঠশিল্পী এবং সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (১৯২০—১৯৮৯)।

১৯৬০ সালে এই গানটি প্রথম প্রকাশ পায়। এই গানটির সুর চার মাত্রার কাহারবা তালে রয়েছে। এই গানে নিরীক্ষামূলক পজ ব্যবহৃত হয়। গানের দ্বিতীয় লাইনে "কই তাহার মত তুমি আমার কথা শুনে" এর পর একটু থেমে যাওয়া (পজ/চধঁংব) লক্ষ্য করবেন।  আবার গানের সঞ্চারী এবং অন্তরা অংশেও একই থেমে যাওয়া (পজ) পাবেন। এইখানে আবহসঙ্গীত থেমে যায়। থাকে না নেপথ্যে স্বর বা সুর। নীরবতার মধ্যে রয়ে যায় শুধু কথা।

গানের কথা

"অলির কথা শুনে বকুল হাসে" এই গানটির কথা (lyrics) এইরূপ—
অলির কথা শুনে বকুল হাসে,
কই তাহার মত তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো?
 ধরার ধুলিতে যে ফাগুন আসে
কই তাহার মত তুমি আমার কাছে কভু আসো না তো?

আকাশ পারে ওই অনেক দূরে
যেমন করে মেঘ যায় গো উড়ে, (২)
যেমন করে সে হাওয়ায় ভাসে
কই তাহার মত তুমি আমার স্বপ্নে কভু ভাসো না তো?
 
চাঁদের আলোয় রাত যায় যে ভরে,
তাহার মত তুমি করো না কেন ওগো ধন্য মোরে? (২)
 
যেমন করে নীড়ে একটি পাখি
সাথীরে কাছে তার নেয় গো ডাকি,
যেমন করে সে ভালবাসে
কই তাহার মত তুমি আমায় কভুও ভালবাসো না তো?
 
লক্ষ্যণীয়,  গানের প্রথম পংক্তির বানান "অলির কথা শুনে বকুল হাসে"। এইটি লেখার সময় "অলিরও কথা শুনে" হবে না। উচ্চারণের সময় "অলির" শব্দ "অলিরও" উচ্চারণ হবে। এইটি একটি কাব্যিক উচ্চারণ যেইখানে সুর/ছন্দের জন্য স্বরান্ত উচ্চারণ প্রয়োজন হয়। একই রকম দেখতে পাবেন অন্য গানে যেমন "আমার পরাণ যাহা চায়" (লেখার সময়), "আমার(ও) পরাণ(ও) যাহা চায়" (গানে উচ্চারণ)।
"অলি" শব্দের অর্থ "ভ্রমর"।

দেখাশোনা

এই গানটির ভিডিও আপনি ইউটিউবে সারেগামা চ্যানেলে দেখতে পারেন। আর গানটি শুনতে পারেন জিওসাবন, গানা, ইত্যাদি স্থানে। 

গানটির স্বরলিপি সংক্রান্ত একটি ভিডিও দেখতে পারেন এইখানে

 আরও দেখুন


মন্তব্যসমূহ